২৯ নভেম্বর, ২০১২

মীনার তিনটি ইচ্ছা পূরণ


তখন রাত বাজে আটটা, লোডশেডিং চলছে। মীনা, রাজু আর টিয়া পাখি মিঠু দাদিকে ঘিরে বসেছে গল্প শোনার আশায়।
দাদি: আইজকা আমি তোমাদের একটা কিচ্ছা শুনামু। বিদেশি কিচ্ছা। আরব দেশে ছিল এক যুবক। নাম আলাউদ্দিন, তার ছিল একখান জাদুর কুপি...
মীনা: ও দাদি, এসব পুরান গল্প আর কত কইবা? আলাউদ্দিন আর দৈত্যর কিচ্ছা তো সবাই জানে। এইবার নতুন কিছু কও না?
দাদি: আরে পোলাপাইন, আমি কি আর নতুন গল্প জানি? আমার কাছে এই একটা গল্পই আছে। ওইটারই পুনঃ প্রচার হইব। শুনলে শুনো নইলে ঘুমাইতে যাও।
মিনা: বাদ দ্যাও দাদি, গল্প শোনান লাগব না। এরচেয়ে এফএম রেডিও শুনি গিয়া।
এফএম রেডিও শুনতে শুনতে মিনা ঘুমিয়ে পড়ল। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্ন দেখা শুরু করল।

মীনার স্বপ্ন
মীনা আর রাজু জাদুর পাটি দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঘুরতে ঘুরতে তারা পদ্মা নদীর কাছে চলে এল। মীনা তখন তার জাদুর কুপিতে ঘষা দিল...
আলাউদ্দিনের দৈত্য: হুকুম করুন মালিক, আমি আপনাদের তিনটা ইচ্ছা পূরণ করব।
রাজু আগেভাগে বলল, আমি চাই, আমাদের এলাকায় যেন একটা গার্লস স্কুল হয়।
মীনা মুখ চেপে হেসে বলল: আরে থামো রাজু, ওই সব চাইলে হইব না, আমাগো জনগণের কথা ভাবতে হইব...আমি চাই পদ্মা নদীর ওপর যেন একটা সেতু নির্মাণ করা হয়।
মীনার এই ইচ্ছার কথা শুনে হাসতে হাসতে দৈত্যটা অদৃশ্য হয়ে গেল। দেখতে দেখতে পদ্মা নদীর ওপর একটা সেতু নির্মাণ হয়ে গেল।
আলাউদ্দিনের দৈত্যটা ফেরত এসে বলল, এবার তোমার দ্বিতীয় ইচ্ছার কথা বলো মীনা, তুমি কি সিনেমার নায়িকা হতে চাও?
মীনা: ছি. ছি. এসব কী বলো দৈত্য? আমাদের জনগণের কথা ভাবতে হইব...আমি চাই পদ্মা নদীর ওপর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ করা হোক।
রাজু: মীনা বু, তুমি কি ইলেকশন করবা নাকি? খালি বিরিজ বানাইতেছ?
দৈত্যটা মীনার দ্বিতীয় ইচ্ছা পূরণ করে ফেরত এল।
মীনা: আমি চাই সাম্প্রতিক সময়ের সব হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার হউক। আসামিগো খুঁইজা বাইর করা হউক।
এইবার যে দৈত্যটা গেল আর ফেরত এল না। স্বপ্নে অপেক্ষা করতে করতে সকাল হয়ে গেল। ঘুম থেকে উঠে মীনা রাজুকে সব খুলে বলল। তারপরে বলল, স্বপ্নের এই ইচ্ছাগুলান এইবার আমি পূরণ করতে চাই।

মীনা, রাজু আর তার বন্ধুদের ‘তিনটি ইচ্ছা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক বৈঠকে
মীনা: বন্ধুরা, আমার পরথম ইচ্ছা আমরা সবাই মিইলা একটা পদ্মা সেতু বানামু।
মীনার বন্ধু: কিন্তু পদ্মা সেতু বানাইতে তো ম্যালা খরচ, ২২ হাজার কোটি টাকা। আমরা গ্রামে মানুষ তো ২২ জনই নাই। এত ট্যাকা কেমনে আসব?
সবাই বলল, ঠিক, ঠিক।
এক মিনিট চিন্তা করে মিনা বলল, আইচ্ছা বন্ধুরা, একটা কাম করলে ক্যামন হয়? আমাদের গ্রামে যে চিকন খাল আছে, অইটার ওপর যদি আমরা দুইটা বাঁশ দিয়া একটা সেতু বানাই আর খালের নাম দিই পদ্মা, তাইলে তো ওইটা একটা পদ্মা সেতু হইয়া যাইব।
সবাই বলল, ভালা বুদ্ধি, ভালা বুদ্ধি। এরপর সবাই মিলে ‘নিজস্ব অর্থায়নে’ খালের ওপর বাঁশ দিয়ে একটা সেতু বানাল। মীনার প্রথম ইচ্ছা পূরণ হলো। এবার দ্বিতীয় ইচ্ছা পূরণের পালা।
রাজু: একটা সেতু বানাইতে গিয়াই তো আমাদের সব টাকা শেষ হয়ে গেল মীনা, এখন আমরা দ্বিতীয় সেতু বানানোর টাকা কই পামু?
মীনা: সেই বুদ্ধিও আমার কাছে আছে রাজু। পাশের গ্রামে খালের ওপর যে সাঁকোটা আছে, ওইটার নাম বদলাইয়া এখন থাইকা আমরা ‘দ্বিতীয় পদ্মা সেতু’ বইলা ডাকমু...
রাজু: নাম বদলানো কি ঠিক হইব?
মিনা: অতসব ভাইবো না রাজু। সরকার যদি নাম বদলাইতে পারে, তাইলে আমরা কেন পারুম না?
সবাই বলল, হ, হ, ভালা বুদ্ধি, ভালা বুদ্ধি। অতঃপর সেই সাঁকোর ওপরে তারা একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিল ‘দ্বিতীয় পদ্মা সেতু’।
মিনা: এইবার আমি আমার তৃতীয় ইচ্ছাটা পূরণ করবার চাই। যদিও স্বপ্নে আমার এই ইচ্ছাটা পূরণ হয় নাই, তয় আমরা বন্ধুরা মিইলা ঢাকা যামু তার পরে আলোচিত সব হত্যাকাণ্ডের আসামি গো খুঁইজা বার করমু।
কিন্তু মানুষের সব ইচ্ছা কি আর পূরণ হয়? ঢাকা এসে গোপনে এসব হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের কাছে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক হলো মীনা আর রাজু। মীনা তখন বলল, ‘এইবার বুজতে পারছি রাজু, স্বপ্নে দৈত্যটা গিয়া আর ফেরত আইল না কেন...
আর বন্ধুরা বলল, খারাপ বুদ্ধি, খুবি খারাপ বুদ্ধি।