২৯ নভেম্বর, ২০১২

একটি রাজনৈতিক টেস্ট ম্যাচ


অংশগ্রহণে
জাতীয়তাবাদী ক্রিকেট দল
আওয়ামী ক্রিকেট দল

ম্যাচের দল ঘোষণা
ম্যাচের আগের রাতে দফায় দফায় বৈঠক শেষে গভীর রাতে দলীয় কার্যালয়ে দল ঘোষণা। সুযোগ না পাওয়া খেলোয়াড়দের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও যানবাহন ভাঙচুর।

ম্যাচ শুরু—টস
টসে আওয়ামী ক্রিকেট দলের জয়লাভ ও ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত। টসে পক্ষপাতিত্ব হয়েছে দাবি করে জাতীয়তাবাদী ক্রিকেট দলের টস বয়কট ঘোষণা। ড্রেসিংরুমে বিক্ষোভ সমাবেশ।

প্রথম দিন
টস-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে খেলা শুরু হতে বিলম্ব। অবশেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সমঝোতায় লাঞ্চের পর খেলা শুরু। জাতীয়তাবাদী দলের বোলিংয়ের তোপে ২০ ওভারে আওয়ামী দলের টপ অর্ডারের চারজন ব্যাটসম্যান আউট। পঞ্চম উইকেট জুটিতে হঠাৎ এক বাউন্সারের আঘাতে আওয়ামী ব্যাটসম্যান আহত। ঘটনার জের ধরে বোলারদের সঙ্গে ব্যাটসম্যানের হালকা বাগিবতণ্ডা। বাউন্সার দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ কর্তৃক জাতীয়তাবাদী দলের বোলার গ্রেপ্তার। প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী দলের প্রথম দিনের খেলা বর্জন। সন্ধ্যায় পল্টনে বিক্ষোভ মিছিল, মতিঝিলে বাসে আগুন। অন্যদিকে, বাউন্সার দেওয়ায় আওয়ামী সমর্থকদের প্রতিবাদী মিছিল এবং রাতে প্রতিপক্ষ দলের ওপর হামলা।



দ্বিতীয় দিন
আটক বোলারের মুক্তির দাবিতে দিনের খেলা শুরু হওয়ার পর থেকে পিচের ওপর জাতীয়তাবাদী দলের অস্ত্রসহ অবস্থান ধর্মঘট। ধর্মঘটের একপর্যায়ে বোলারের মুক্তির আশ্বাস পেয়ে খেলা শুরু। দিন শুরুর দ্বিতীয় ওভারেই আওয়ামী দলের ক্যাপ্টেন এলবিডব্লিউর শিকার। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ভুল দাবি করে ঘটনাস্থলে আম্পায়ারকে ব্যাট দিয়ে ধোলাই। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে স্টেডিয়ামে আওয়ামী সমর্থক ও খেলোয়াড়দের ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ। দিনের খেলা স্থগিত রেখে আউটের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আপিল। ‘আওয়ামী ক্যাপ্টেনের আউট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না’ জানতে চেয়ে থার্ড আম্পায়ারের আদেশ জারি।
মাঠে আম্পায়ারের ওপর হামলা এবং স্টেডিয়াম এলাকায় ভাঙচুরের প্রতিবাদ হিসেবে পরদিন দেশব্যাপী জাতীয়তাবাদী দলের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঘোষণা। ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাসে অগ্নিসংযোগ, নিহত ২। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ১৮১।


তৃতীয় দিন
হরতালের কারণে মাঠ খেলোয়াড়শূন্য। উল্টো পিকেটিংয়ের অপরাধে কাকরাইল থেকে জাতীয়তাবাদী দলের তিন ব্যাটসম্যান আটক এবং পুলিশের লাঠির আঘাতে উইকেটকিপার আহত। গভীর রাতে ব্যাটসম্যানদের মুক্তি।
অন্যদিকে, হরতালের বিরুদ্ধে আওয়ামী ক্যাডার বাহিনীর অস্ত্রসহ শান্তিপূর্ণ (?) বিক্ষোভ মিছিল। আওয়ামী খেলোয়াড়দের আপিলের বিরুদ্ধে থার্ড আম্পায়ারের রায়, ‘আওয়ামী ক্যাপ্টেনের আউট বৈধ।’ রায় মেনে নিতে না পেরে থার্ড আম্পায়ারের এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর।



চতুর্থ দিন
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আবার খেলা শুরু। আওয়ামী দল ১৮০ রানে অলআউট। জাতীয়তাবাদী দলের ব্যাটিং শুরু। দলীয় ১০ রানের মাথায় জাতীয়তাবাদী দলের বিরুদ্ধে একটি রানআউটের সিদ্ধান্ত। আম্পায়ার পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন দাবি করে জাতীয়তাবাদী দল কর্তৃক মাঠে আম্পায়ারের কুশপুত্তলিকা দাহ। মাঠ থেকে ওয়াকআউট করে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা, ‘এই আম্পায়ারের অধীনে জাতীয়তাবাদী দল কোনো টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহণ করবে না।’ নিরপেক্ষ আম্পায়ার পাওয়া না গেলে বাকি ম্যাচ রাজপথে খেলার ঘোষণা।
আওয়ামী দলের দাবি, ‘নিশ্চিত পরাজয়ের সম্মুখীন হতে হবে জেনে জাতীয়তাবাদী দল এখন ম্যাচ বয়কটের পাঁয়তারা করছে।’ তাদের রাজপথে দেখে নেওয়ার ঘোষণা।


পঞ্চম দিন
নিরপেক্ষ আম্পায়ারের ইস্যুতে পল্টনে দুই দল মুখোমুখি। পুলিশের উপস্থিতিতে কয়েক শ রাউন্ড গোলাগুলি, বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ। সহিংসতায় দেশব্যাপী নিহত ৩, আহত শতাধিক। মাঠে উভয় দলের উপস্থিতি না থাকায় পঞ্চম দিনের খেলা পরিত্যক্ত করে ম্যাচ ড্র ঘোষণা।


ম্যাচ শেষে
জাতীয়তাবাদী দল
আওয়ামী ক্রিকেট দল কখনোই শান্তিপূর্ণ ক্রিকেট চায় না। ম্যাচের ফল ড্র হলেও প্রকৃতপক্ষে বিজয় জাতীয়তাবাদী শক্তিরই হয়েছে।

আওয়ামী দল
দেশজুড়ে অরাজকতা চালিয়ে ম্যাচের ফল পাল্টে দেওয়ার ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। ফল বরাবরের মতো আমাদের পক্ষে রয়েছে।