২৯ নভেম্বর, ২০১২

ধাঁধার জবাব

রস+আলো, ১৬ এপ্রিল ২০১২


ধাঁধা-১
একটা মোরগ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ডিম পাড়ল, সেই ডিমের মালিক কোন দেশ?

সরকার: এই সরকার প্রথম থেকেই মোরগের সামাজিক অধিকারের ব্যাপারে সচেতন। মোরগ-মুরগিতে ভেদাভেদ না থাকায় দেশের যেকোনো মোরগ বর্তমানে নিশ্চিন্তে ডিম পাড়তে পারছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় খুব শিগগিরই মোরগের ডিম বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করা হবে। এ দেশকে ‘মোরগের ডিম’-এর দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর।

বিরোধী দল: দেশের জনগণ জানতে চায়, একটা বাংলাদেশি মোরগ কেন সীমান্তে গিয়ে ডিম পারবে? কারণ, এই সরকারের অত্যাচারে দেশের মোরগ নিজ দেশের মাটিতে ডিম পাড়তে ভয় পায়। অবিলম্বে দেশের মাটিতে মোরগের ডিম পাড়ার নিরাপত্তা দিতে হবে। না হলে ব্যর্থতার দায়ে এই তাঁবেদার সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী: সীমান্তে ডিম পাড়ার ব্যাপারটি আসলে খুবই স্পর্শকাতর। এই ডিমের মালিকানার ব্যাপারে খুব শিগগিরই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের ব্যবস্থা করা হবে। আশা করা যাচ্ছে, সমুদ্রসীমা জয়ের মতো মোরগের ডিম উদ্ধারেও আমরা সফলতা অর্জন করতে পারব।

সুশীল সমাজ: একটা মোরগ, তার মাঝেও আজ দেশপ্রেমের সংকট দেখা যাচ্ছে। নিজের জাতীয়তাবোধ ভুলে গিয়ে সে আজ সীমান্তে গিয়ে ডিম পাড়ছে। এই সামাজিক অবক্ষয় থেকে আমাদের দ্রুত উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে।

মোরগের বক্তব্য: মনে হচ্ছে, একটি কুচক্রী মহল আমাদের সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের মিথ্যাচারের আশ্রয় নিচ্ছে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, মোরগ ডিম পাড়ে না, ডিম পাড়ে মুরগি। মূল ঘটনা হচ্ছে, দেশের বাজারে ডিমের সংকট ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে আমি সীমান্ত দিয়ে ডিম পাচার করছিলাম। কিন্তু ভুলক্রমে একটা ডিম সীমান্তে পড়ে গেলে এই ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়।

ধাঁধা-২
একটা গাছের ডালে ১০টা পাখি বসে আছে। একটাকে গুলি করা হলো, ডালে কয়টা পাখি থাকল?


সরকার: আমাদের সরকার পাখিদের অধিকারের ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কিন্তু সরকার তো আর গাছের ডালে উঠে পাখিদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে না। তাই দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে। অন্যায়ভাবে এই পাখি হত্যাকারীকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া নিহত পাখির পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিরোধী দল: এই অত্যাচারী সরকার পাখিদের মানুষ বলে গণ্য করে না। দেশের আনাচেকানাচে ডালে ডালে বিনা অপরাধে নির্বিচারে পাখিদের হত্যা করা হচ্ছে। আমরা এই পাখি হত্যার দ্রুত বিচার চাই। দেশের সব পাখি আজ এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়। শিগগিরই দেশে পাখি সম্মেলন করে সরকার পতনের আলটিমেটাম দেওয়া হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে ভালো। এই পাখি হত্যার ব্যাপারটি আমরা গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখছি। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিরোধী শক্তির মদদ সুস্পষ্ট। হত্যাকারীকে ৪৮ ঘণ্টার ভেতরে খুঁজে বের করার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত: বিনা অপরাধে পাখি হত্যার ব্যাপারে মার্কিন প্রশাসন উদ্বিগ্ন।

ডালে বসে থাকা পাখিদের একজন: আমি এই ঘটনার একজন প্রতক্ষ্যদর্শী। ডালে বসে আমরা দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় মগ্ন ছিলাম। হঠাৎ করেই প্রচণ্ড জোরে গুলির আওয়াজ শুনলাম। এরপর দেখি, আমার পাশের পাখিটা মরে পড়ে আছে। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনটা পাখি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। আমিসহ পাঁচজন উড়ে গিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করি। তবে একটা পাখি তখনো গাছের ডালে বসা ছিল। কারণ, সে কানে শোনে না, চোখেও দেখে না। পরে শুনেছি পুলিশ তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে ধরে নিয়ে গেছে!